নতুন বাজেট ঘোষনা গণমানুষের নিরাপত্তায় বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা - Dot Tv News | Latest Bangladeshi News | Breaking News | Bangla Online News | আজকের সর্বশেষ খবর

সর্বশেষ

Home Top Ad

Post Top Ad


Friday, June 12, 2020

নতুন বাজেট ঘোষনা গণমানুষের নিরাপত্তায় বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা


Dot Tv Bd,Dot Tv,Dot Tv News,Bangla News,Breaking News Bd,Bd News,bangla newspaper,bangla online newspaper, online newspaper bd,আন্তর্জাতিক খবর,বাংলা খবর,বাংলা সংবাদ,আজকের খবর,আজকের সংবাদ,বাংলা সংবাদ শিরোনাম,dottvbd, dottv,dottvnews,bdnews,bdonline news,নতুন বাজেট ঘোষনা গণমানুষের নিরাপত্তায় বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা,
নতুন বাজেট ঘোষনা গণমানুষের নিরাপত্তায় বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা
যে অমানিশার অন্ধকার আমাদের চারপাশকে ঘিরে ধরেছে, তা একদিন কেটে যাবেই। এই বাজেটের হাত ধরেই আমরা অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে আগের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক ভিত রচনা করব’- এমন মন্তব্য করে প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশের স্বপ্ন দেখিয়ে আগামী অর্থবছরের রেকর্ড ঘাটতির বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। 

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এ প্রস্তাব পেশ করেন তিনি। তবে ‘বাস্তবতাবিবর্জিত’ উচ্চাকাঙ্ক্ষার এই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের পক্ষে আইএমএফের পূর্বাভাস তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, আগামী অর্থবছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

যদিও সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বলেছে- আগামী অর্থবছর জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি এক শতাংশের বেশি হবে না। এদিকে রেকর্ড ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী, যা বেসরকারি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে। আর কালো টাকা সাদা করার সুযোগের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

তবে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে মধ্যবিত্তকে কিছুটা স্বস্তি দেয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। আগামী অর্থবছর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ টাকার বেশি থাকলে গ্রাহকদের আবগারি শুল্ক গুনতে হবে। আর বাড়বে রূপচর্চাকারীদের ব্যয়।

অপরিহার্য ব্যয়ে কল্পনাবিলাসী আয় দেখিয়ে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামের আগামী বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এ ব্যয় মেটাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা।

এর মধ্যে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ হচ্ছে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এই আয় ও ব্যয়ের ফারাক ঘাটতি থাকবে (অনুদানসহ) ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

আর অনুদান ছাড়া এ ঘাটতির পরিমাণ হবে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, এটি জিডিপির ৬ শতাংশ। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারই প্রথম ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশ অতিক্রম করেছে।

বিদ্যমান মন্দা পরিস্থিতি উল্লেখ করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির হিসাবনিকাশ সম্পূর্ণ ওলটপালট করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৩ শতাংশ কমবে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে-এমন পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

আর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার হিসাবে বৈশ্বিক পণ্যবাণিজ্য কমবে ১৩-২০ শতাংশ। এ সময় কর্মহীন হয়ে পড়বে ১৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষ-এমন পূর্বাভাস আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও)। এ ছাড়া আঙ্কটাডের হিসাবে বিনিয়োগ কমবে ৫-১৫ শতাংশ।

বিশ্বব্যাপী এমন অর্থনৈতিক দুর্যোগের বাইরে বাংলাদেশ নয়। একই ধারায় দেশেও অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে। মন্দার চিত্র খোদ সরকারের হিসাবে উঠে এসেছে। চলতি অর্থবছর দেশের মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। করোনাভাইরাসের কারণে সরকার সংশোধন করে নামিয়ে এনেছে ৫ দশমিক ২ শতাংশে। এরই ভিত্তিনির্ভর আগামী অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন অসম্ভব বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

প্রস্তাবিত বাজেটে অস্বাভাবিক ব্যয় মেটাতে ব্যাংক থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন বাজেটে। এতে বাধগ্রস্ত হবে বেসরকারি বিনিয়োগ। এ ছাড়া বেশি ঋণ নেয়ার কারণে আগামী অর্থবছর সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হবে ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আঘাতে এ মুহূর্তে দেশের সার্বিক অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই নিম্নমুখী। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে এরই মধ্যে কর্মহীন ও হতদরিদ্র হয়ে পড়েছে কয়েক কোটি মানুষ। বিপর্যয় নেমে এসেছে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে। বন্ধ আছে সব ধরনের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ।

স্থবিরতা বিরাজ করছে কৃষি ও পর্যটন খাতে। বিগত এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে চাপের মুখে রয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। এমন প্রতিকূল পরিবেশে যেখানে সরকারের আয় কমার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের, সেখানে অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছর রাজস্ব আয়ের বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা।

এই আয় অর্জনে ব্যাংক গ্রাহক ও বিমানযাত্রীদের টার্গেট করেছে সরকার। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ টাকার বেশি থাকলে আবগারি শুল্ক গুনতে হবে ৩ হাজার টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যাংকে থাকলে ১৫ হাজার টাকা ও ৫ কোটি টাকার উপরে থাকলে গুনতে হবে ৪০ হাজার টাকা। বিমান টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টারের ভাড়াও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। বাড়বে মোবাইলে খরচও। সিম কার্ডের ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ভোক্তাদের ব্যয় বাড়বে।

আগামী বছর ফার্নিচার ক্রয়েও ব্যয় বাড়বে ক্রেতার। আসবাবপত্র বিপণন কেন্দ্রে মূসক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। শৌখিন লঞ্চযাত্রীর ভাড়া বেশি গুনতে হবে এখন থেকে। কার ও জিপ গাড়ির বিআরটির সার্ভিসে সব ধরনের খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এ ছাড়া রূপচর্চাকারীদের বেশি টাকা গুনতে হবে আগামী বছর থেকে। বাড়বে সিরামিক ও বেসিন পণ্যের দামও। সব ধরনের সিগারেট, বিড়ি ও জর্দার দাম বাড়বে। আগামী বছর কর-জালের আওতায় আরও ৫ লাখজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

মধ্যবিত্তদের স্বস্তির খবর হচ্ছে- পুরুষের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা, নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ছাড়া সর্বনিম্ন কর ১০ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর প্রথমবার অনলাইনে কর দাখিল করলে রেয়াত দেয়া হবে ২ হাজার টাকা।

ব্যাংক, বীমা, লিজিং, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল কোম্পানি ছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়-এমন কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট কর আড়াই শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে। আগামী অর্থবছর দাম কমবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের।

উৎসে আয়কর কমানো হয়েছে চাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ ও রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্থানীয় পর্যায়ের সরবরাহের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া রসুন ও পেঁয়াজ আমদানি অগ্রিম কর হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে পেঁয়াজ আমদানিতে আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে।

পোশাকসহ সব ধরনের পণ্য রফতানিমূল্যের ওপর উৎসে কর কমছে। আর সুযোগ থাকছে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয়ে কেনা ফ্ল্যাট বা প্লট বৈধ করার সুযোগ। একই সুযোগ দেয়া হয়েছে শেয়ারবাজারে। অপ্রদর্শিত আয়ের অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে প্রশ্ন করা হবে না।

তবে স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। শিল্পের আমদানিকৃত কাঁচামালের শুল্ক হ্রাস, কৃষি যন্ত্রপাতির দামও কমবে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মানবসম্পদ উন্নয়নে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ, কৃষি খাতে ২২, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১৩, যোগাযোগে ২৫ দশমিক ৪ এবং অন্যান্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১১ দশমিক ১ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এটি মোট বরাদ্দের ২৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে সঠিকভাবে মোকাবেলা ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব দৃঢতার সঙ্গে কাটিয়ে ওঠার স্বার্থে আমরা গতানুগতিক বাজেট থেকে এবার কিছুটা সরে এসেছি। যে কারণে এবার বাজেটে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত পরিবর্তন আনা হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতকে সর্বাপেক্ষা অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবং করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কৃষি হচ্ছে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার খাত।

তৃতীয় অগ্রাধিকার খাত হচ্ছে দীর্ঘ ছুটি ও লকডাউনের কারণে দরিদ্র কর্মজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা সম্প্রসারণ করা। আর সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আংশিক বন্ধ থাকায় শিল্প উৎপাদন বন্ধ, কর্মহীনতা ও কর্মহীন হয়ে দেশে ফেরা প্রবাসীদের জন্য কর্মসৃজন ও পল্লী উন্নয়ন হচ্ছে চতুর্থ অগ্রাধিকার খাত।

প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে গবেষণা উন্নয়নে ১শ’ কোটি টাকার তহবিল গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় ২৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৮ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।

এর মধ্যে কৃষি খাতে ভর্তুকি দেয়া হবে ৯ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। আর কৃষি, মৎস্য ও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে ২২ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে।

সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় ৫ লাখ বয়স্ক, সাড়ে তিন লাখ বিধবা এবং ২ লাখ ৫৫ হাজার প্রতিবন্ধীকে নতুন করে ভাতা দেয়া হবে। এ ছাড়া গ্রামে বসবাস করা দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানে ১শ’ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়।

রফতানির গতি ফিরিয়ে আনতে বিদ্যমান প্রণোদনার সঙ্গে আরও এক শতাংশ অতিরিক্ত রফতানি প্রণোদনা দেয়া হবে।

যেভাবে বাজেট উত্থাপন : বাজেট উত্থাপনের সময় ৩৫০ এমপির মধ্যে মাত্র ৮৮ জন জাতীয় সংসদে উপস্থিত থাকার জন্য তালিকাভুক্ত ছিলেন। দেশের সংসদীয় ইতিহাসে এমনটি আর কখনও ঘটেনি। করোনা মহামারীর মধ্যে এই বাজেট উত্থাপন হয়েছে স্বল্পপরিসরে।

এর আগে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মাত্র ১০ জন এমপি উপস্থিত থাকার সুযোগ পান। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর বেলা ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাকালের বাজেট অধিবেশন উত্থাপন শুরু হয়।

এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। বেলা তিনটা ৫২ মিনিটে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশন রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন।

সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন। বাজেট পেশকালে অধিবেশনে চিরচেনা উৎসবের আমেজ দেখা যায়নি। বরং সর্বত্র ছিল কঠোর সতর্কতা।

এদিকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে উত্থাপন হলেও দেশের ৪৯ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি। ব্যক্তিগতভাবে অর্থমন্ত্রীর এটি দ্বিতীয় বাজেট। প্রতি বছর বাজেট পেশের দিনটিতে সংসদ ভবনজুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ। কিন্তু এবার ছিল ভিন্ন চিত্র।

সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশে ছিল কড়াকড়ি। আর মূল ভবনে স্বল্পসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করেছেন। সংসদ ভবনের প্রবেশমুখে সবাইকেই জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের তাপমাত্রা মাপা হয়।

অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত সংসদ সদস্যরা বিগত দিনের আসন বণ্টন এড়িয়ে করোনা সতর্কতা মেনে আসন গ্রহণ করেন। অধিবেশন কক্ষে এক থেকে দুটি আসন পর পর তারা বসেছিলেন।

অধিকাংশের মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও মাথায় ক্যাপ ছিল। সংসদ পরিচালনায় দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও একই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।বাজেট উত্থাপনের দিন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকলেও এবার কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

আগেই সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার স্থগিত করা হয়। তবে বরাবরের মতো রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদে উপস্থিত থেকে বাজেট পেশ প্রত্যক্ষ করেন।বাজেট কাঠামো : আগামী বাজেটের আকার হচ্ছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এ ব্যয় মেটাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৭৮ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা।

আয় ও ব্যয়ের ঘাটতি থাকবে (অনুদানসহ) ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া এ ঘাটতির পরিমাণ হবে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশের সমান।
মোট আয় ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকার মধ্যে এনবিআর রাজস্ব ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, করবহির্ভূত রাজস্ব লক্ষ্য ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কর ব্যতীত প্রাপ্তি হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা।

এ বছর সরকারের পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবর্তক ব্যয় ৩ লাখ ১১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।আগামী বছর ঘাটতি বাজেট পূরণে অধিক মাত্রায় ঋণনির্ভর হচ্ছে সরকার। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে।

এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য ঋণ নেয়া হবে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি বৈদেশিক খাত থেকে ঋণ নেয়া হবে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা।

বাজেট পরিক্রমা : বৃহস্পতিবার দেশের ইতিহাসে ১২তম ব্যক্তি হিসেবে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে গত ১২ বার বাজেট দিয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন তাজউদ্দীন আহমদ।প্রথম বাজেটসহ তিনি মোট তিনবার বাজেট পেশ করেন। ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আজিজুর রহমান মল্লিক। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান টানা তিনবার বাজেট পেশ করেন।

১৯৭৯-৮০ অর্থবছরে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এমএন হুদা বাজেট পেশ করেন। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে এম সাইফুর রহমান মোট ১২ বার বাজেট ঘোষণা দিয়েছেন। তবে চার অর্থবছর বাজেট দেন অর্থমন্ত্রী এম সায়েদুজ্জামান।

















No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Pages