ইরান ও ইরাকের উত্তর সীমান্তে আঘাত হানা ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাওয়া খবরে অন্তত ৪৪৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে ইরানের সংবাদ মাধ্যম পার্সটুডে। নিহতদের মধ্যে ৪৩৮ জনই ইরানের নাগরিক। ৭ দশমিক ৩ মাত্রার শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন ৭ হাজারেরও বেশি।
ইরানের স্থানীয় সময় রোববার রাত ৮টা ১৮ মিনিটে ভূমিকম্প আঘাত হানে এবং এর মূল কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পটি মূল আঘাত হেনেছে ইরাকের আধা-স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলে। ওই অঞ্চলের সীমান্তে অবস্থিত ইরানের কুর্দিস্তান ও কেরমানশাহ প্রদেশও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, এ ভূমিকম্পে কেরমানশাহ প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানেই নিহত হয়েছে ১২৯ জন। নিহতদের মধ্যে সারপোলে জাহহাব শহরে ৬৮ জন, কাসরে শিরিন শহরে ৩৮ জন এবং কেরমানশাহ শহরে ২৩ জন প্রাণ হারিয়েছে। ইরানের পার্সটুডের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইরাকি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটির সুলাইমানিয়া প্রদেশে অন্তত ৩০ জন নিহত ও কয়েকশ’ মানুষ আহত হয়েছে। ইরানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিষয়ক অধিদফতর জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ফলে কেরমানশাহ প্রদেশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এবং ইন্টারনেট সেবায় বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া গ্রাম এলাকার কিছু ঘর-বাড়ি ধ্বংসের খবর পাওয়া গেছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ভূমিকম্পকবলিত এলাকাগুলোতে জোরেশোরে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুর রেজা ফাজলিকে নির্দেশ দিয়েছেন। ইরানের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ভূমিকম্পের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, তা তুরস্ক, আলমেনিয়া, কুয়েত, জর্দান, লেবানন, সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার থেকেও অনুভূত হয়েছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ জানিয়েছে, কুর্দি সরকার শাসিত সুলাইমানিয়া শহর থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে হালাবজার কাছে ভূমিকম্প প্রচণ্ডভাবে আঘাত হেনেছে। ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ভূমিকম্পের কেন্দ্রের দূরত্ব অনেক হলেও সেখানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বাগদাদের ভবনগুলো প্রচণ্ডভাবে কেঁপে ওঠে।
ভূমিকম্পে এখানকার কয়েকটি গ্রামে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে এতে বলা হয়েছে। গ্রামগুলোতে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা ইটের বাড়িগুলোর ধ্বংসস্ত্মূপের নিচে আটকেপড়া জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন উদ্ধারকর্মীরা। ভূমিকম্পের কারণে অন্ত্মত ১৪টি প্রদেশে ভূমিধস হওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ইরাকের কুর্দিস্ত্মানের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সেখানে অন্ত্মত চারজন নিহত ও অন্ত্মত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। ভূমিকম্পে ইরাকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত্ম হয়েছে সুলাইমানিয়া শহরের ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর দারবান্দিখান। এখানে ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কুর্দিস্ত্মানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রেকবত হামা রাশীদ। এই ভূমিকম্পে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শহর দিয়ারবাকিরও কেঁপে ওঠে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে সেখান থেকে হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির বিস্ত্মারিত খবর পাওয়া যায়নি। ইরানের ভূমিকম্পবিষয়ক কেন্দ্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত্ম ১১৮টি পরাঘাত রেকর্ড করেছে তারা এবং আরও পরাঘাত হবে বলে আশঙ্কা করছে। ইরানি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষের জরম্নরি আশ্রয় দরকার। ভূপৃষ্ঠের ৩৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পটি ইসরায়েল ও কুয়েতেও অনুভূত হয়েছে
No comments:
Post a Comment