রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের ব্যর্থতা ঢাকতে বিএনপিকে নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যাচার করছেন বলে অভিযোগ করেছে দলটি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন- বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। এ মিথ্যাচারের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংসদ ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জিয়া পরিবারের সদস্যদের নামে বিদেশে কী কী সম্পদ আছে তা নিয়ে তদন্ত চলছে। সত্যতা যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর এসব উক্তি বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মূলত রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ব্যর্থতা ঢাকতেই এই মিথ্যাচার করা হচ্ছে। ’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। মেগা প্রজেক্টের নামে সরকার বিলিয়ন ডলার লোপাট করছে। লুট করছে জনগণের সম্পদ। শেয়ার মার্কেট লুট, ব্যাংক লুট, পাওয়ার প্ল্যান্ট, পদ্মা সেতু, কুইক রেন্টাল, মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, উড়াল সেতুতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে এখন জিয়া পরিবারের সদস্য এবং গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রীর বিরুদ্ধে এই মিথ্যাচারের জবাব জনগণ দেবে।’
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাজই হচ্ছে প্রকৃত ইস্যুকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন ইস্যু তৈরি করা। প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বশীল পদে থেকে মিথ্যা ও ভুয়া কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করছেন। কারণ এই সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরে আছে।’
বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপির ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে দেয়ার অভিযোগ এনে ফখরুল বলেন, ‘পুলিশ আমাদের ত্রাণের ২২টি ট্রাক আটকে রাখে। নেতৃবৃন্দকে বিএনপি অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের নামে সরকারি অর্থে ত্রাণ বিতরণ করেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ত্রাণের নামে আওয়ামী লীগের বিশাল লুটপাটের সুযোগ সৃষ্টি করে, অন্য কাউকে ত্রাণ দেয়ার সুযোগ না দেয়া মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনেরও বিদেশে সম্পদের কথা সংসদে আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে আজকের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গতকাল সংসদে বিএনপি ও আমার নামে সম্পদের যে সব তথ্য দেয়া হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। এর রাজনৈতিক উদ্দেশে- কাল্পনিক গল্প জড়িয়ে বিএনপিকে নানাভাবে ঘায়েল করা এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা।’
মোশাররফ বলেন, ‘মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কানাডায় বিএনপি নেতাদের যে সেকেন্ড হোম আছে তার তালিকা প্রকাশ করুন। চ্যালেঞ্জ করছি, আমাদের বিরুদ্ধে এসব কল্পকাহিনীর সত্যতা গত ১০ বছর প্রমাণ করতে পারেনি, এখনো পারবে না।’
এদিকে আগামী দূর্গা পূজা উপলক্ষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বাড়িতে প্রস্তুতি সভাতে বাধা দেয়ার অভিযোগ করা হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।
এ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘সরকার মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে কার্যত তারা তা বিশ্বাস করে না। তাদের ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে পূজার প্রস্ততিতে বাধা দেয়ার মাধ্যমে। এটাই তাদের চেহারা।’
সংবাদ সম্মেলনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘মুখে অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে সরকার সাম্প্রদায়িক কাজ করে। লড়াই করে হলেও আমরা পূজার আনন্দে জনগণের কাজে পৌঁছাব। নেতাকর্মীরা তাতে পিছ-পা হবে না। ভয়কে জয় করতেই হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান মো. সালাহ উদ্দিন, বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবীব, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, নিপুন রায় চৌধুরী প্রমুখ।
No comments:
Post a Comment